দেশের সব হাসপাতালে শাটডাউন ঘোষণা!

ডেস্ক রিপোর্ট :


অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে হামলা ও জরুরি বিভাগে ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ীদের গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবিসহ আরও কয়েকটি দাবিতে সারা দেশে সরকারি–বেসরকারি সব হাসপাতালে শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

আজ রোববার দুপুরে ঢামেক হাসপাতালে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন তাঁরা। এটি প্রাথমিক কর্মসূচি জানিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেছেন, আজই দুপুর ২টায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।

কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুল আহাদ সাংবাদিকদের বলেন, কর্তৃপক্ষ দায়ীদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার, চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় স্বাস্থ্য পুলিশ গঠনের ঘোষণা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন পাশের দাবিতে সারা দেশে সব হাসপাতালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ (হাসপাতালে সেবা বন্ধ) ঘোষণা করা হলো।

অবশ্য এরআগে সকাল থেকেই ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগসহ সব বিভাগে সেবা বন্ধ রেখেছেন আন্দোলনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এতে যোগ দিয়েছেন নিয়মিত চিকিৎসকরাও। গতকাল শনিবার আজ রাত ৮টা থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও হঠাৎ করে সকাল থেকেই সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা।

চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে হাসপাতাল। রোগীরা পড়েছেন বিপাকে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। কেউ অপেক্ষা করছেন সেবা পাওয়ার আশায়।

সকাল থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়া ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে বৈঠকে বসেন হাসপাতালটির পরিচালক। চিকিৎসা সেবা চালানোর আহ্বান জানান তিনি। তবে সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। সমস্বরে চিকিৎসকরা বলে ওঠেন, চিকিৎসা দেব না। এরপর পরিচালক উঠে যান।

চিকিৎসাধীন এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে হামলা ও আরেক ঘটনায় জরুরি বিভাগে ভাঙচুর নিয়ে শনিবার থেকে আন্দোলনে নেমেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

জানা গেছে, আজ রোববার রাতের মধ্যে চিকিৎসকদের ওপর হামলায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম ছিল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। আর জরুরি বিভাগে ভাঙচুর নিয়েও নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন তাঁরা। আলটিমেটাম অনুযায়ী রাত ৮টা থেকে ছিল কর্মবিরতিতে যাওয়ার কর্মসূচি। তবে দুই ঘটনা মিলিয়ে তার আগেই সকাল থেকে ঘোষণা ছাড়াই সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুরুতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা নামলেও এক পর্যায়ে নিয়মিত চিকিৎসকরাও এতে যোগ দেন।

গতকাল শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষার্থী আহসানুল হক দীপ্তর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রথম ঘটনার সূত্রপাত। অবহেলায় তাঁর মৃত্যু হয় অভিযোগ তুলে দীপ্তর ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ঢামেকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে চিকিৎসকদের মারপিট করেন। এ সময় আহত হন নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ইমরান, মাশরাফি ও জুবায়ের।

মারপিটের শিকার চিকিৎসক ইমরান শনিবার রাতে বলেন, ‘এক শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমাদের এখানে মারা যায়। পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোনো কথা না বলেই অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে আমাদের তিন চিকিৎসককে মারপিট করে। এমনকি আমাদের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ড থেকে মারতে মারতে পরিচালকের রুম পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়।

‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের কর্মপরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে এবং যারা আমাদের গায়ে হাত তুলেছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন এটি অত্যন্ত নেককারজনক ঘটনা। আমরা হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক এবং বিইউবিটির ভিসি ও শিক্ষার্থীদের সাথে সভাকক্ষে আলোচনা করেছি।

‘ঘটনার বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি হবে এবং যারা এই চিকিৎসকদের গায়ে হাত দিয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ রোববার রাত আটটার মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে গ্রেপ্তার করার জন্য বলা হয়েছে। এরপর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না দিলে চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী মারা গেছে। আমরা মর্মাহত, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমাদের চিকিৎসকদের তারা মারপিট করতে পারেন। আমার চিকিৎসকদের যদি কোনো অবহেলা থাকে বা কোনো ধরনের গাফিলতি থাকে তাহলে তারা হাসপাতালের পরিচালকের কাছে এসে অভিযোগ করতে পারতেন। কিন্তু তারা সেটি না করে আমাদের তিন চিকিৎসককে মারপিট করেছে, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং মানা যায় না।’

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা শনিবারই ঢাকা মেডিকেলে ‘উই ওয়ান জাস্টিস’ স্লোগান দিয়ে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে মিছিল করছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি করেন তারা।

ওই ঘটনার পর একই দিন শনিবার মধ্যরাতে খিলগাঁও সিপাহীবাগ এলাকা থেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসা নিতে আসেন। ওই সময় অন্য আরেকটি গ্রুপ চাপাতিসহ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় চালানো হয় ভাঙচুর। হাতেনাতে চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনীতে দেয় কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং আমি চিকিৎসকদের আশ্বস্ত করছি তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমি নিলাম। আমি সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের সাথে কথা বলেছি, এখানে চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় জরুরি বিভাগে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন হবে এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’